কড়া নাড়ছে ২০২৩ ওডিআই বিশ্বকাপ। ১৩তম বিশ্বকাপটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভারতে। প্রথমবারের মতো ভারত একক ভাবে ওডিআই বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। শেষ বারের মতো ১০ দলের বিশ্বকাপ হবে এবার। আগামি বিশ্বকাপে দল সংখ্যা ১০ থেকে ১৪ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি। এবারের বিশ্বকাপের সিলেকশনটা অন্যবারের থেকে ভিন্ন।
কীভাবে দশ দলের সিলেকশন হবে? কোন কোন ভেন্যুতে খেলা গুলো অনুষ্ঠিত হবে? কয়টি ম্যাচ হবে? কোন দল কোন দলের সাথে খেলবে? ক্রিকেটপ্রেমীদের মাথায় এখন শুধু এই প্রশ্নগুলো ঘুরছে। এই লেখায় আমরা এই প্রশ্নগলো সহ বিশ্বকাপ সম্পর্কে আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর দিব।
১০ দলের সিলেকশন পদ্ধতি
এবারের বিশ্বকাপ দলের সিলেকশন হচ্ছে আইসিসি সুপার লিগ র্যাংকিং অনুযায়ী। পূর্বে আইসিসি ওডিআই র্যাংকিং এর প্রথম ৮ দল সরাসরি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করত এবং বাকি ২টা দল কোয়ালিফায়ার রাউন্ড থেকে নেওয়া হতো। কিন্তু এবার আইসিসি বিশ্বকাপের জন্য সুপার লিগ চালু করেছে।
সুপার লিগের ১৩টি দল প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ম্যাচ খেলবে। এবং এখান থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে আয়োজক দেশ ভারত সহ র্যাংকিং এর প্রথম ৮ দল বিশ্বকাপের মূল পর্বে প্রবেশ করবে। এবং বাকি ৫ দল এবং আইসিসি এর সহকারী ৫ দল কোয়ালিফায়ার রাউন্ড খেলবে। সেখান থেকে ২টি দল মূল পর্বে প্রবেশ করবে।
আইসিসি সুপার লিগ র্যাংকিংঃ
উপরের র্যাংকিং এর প্রথম ৮দল (আয়োজক দেশ ভারতসহ) বিশ্বকাপের মূল পর্বে প্রবেশ করেছে।
বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার
সুপার লিগের তলানীর ৫দল এবং আইসিসি এর সহকারী ৫দল খেলবে বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার। আইসিসির সহকারী ৫দল সুপার লিগ ২ এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্ট থেকে সিলেক্ট করা হয়েছে।
কোয়ালিফায়ার রাউন্ডটি অনুষ্ঠিত হবে জিম্বাবুয়ের হারারে ও বুলাওয়ে স্টেডিয়ামে। ১০টি দলকে ২টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে।
গ্রুপ পর্বের খেলা শুরু হবে ১৮ই জুন এবং ফাইনাল হবে ৯ই জুলাই। এই ১০ দল থেকে প্রথম ২ দল খেলবে মূল পর্বে।
বিশ্বকাপের মূল পর্ব
বিশ্বকাপের মূল পর্বের প্রথম ম্যাচটি হবে ৫ অক্টোবর। বিগত আসর গুলোতে প্রথম ম্যাচটি স্বাগতিক দেশ খেললেও এবার হয়ত এমনটা দেখা যাবে না। এবারের প্রথম ম্যাচটি হয়ত গত আসরের ফাইনালে অংশগ্রহণ করা দুই দল ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড খেলবে।
ফাইনাল ম্যাচটি ২৬শে নভেম্বর হবে এমন ঘোষণা দিয়েছিল আইসিসি। কিন্তু পরে তা পরিবর্তন করা হয়। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী ফাইনাল হবে ১৯শে নভেম্বর।
এবারের বিশ্বকাপে কতটি ম্যাচ হবে? এবং কোন দল কোন দলের বিপক্ষে খেলবে?
বিশ্বকাপের মুল পর্বে এবার সর্বমোট ৪৮ টি ম্যাচ হবে৷ ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্রুপ ভিত্তিক ভাবে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপে নিয়মটি পরিবর্তন করা হয় ম্যাচ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। ২০১৯ সালের সিলেকশন পদ্ধতিটি ছিল রাউন্ড রবিন ও নক আউট। এবারের ম্যাচগুলো ২০১৯ বিশ্বকাপের মতোই রাউন্ড রবিন ও নক আউট পদ্ধতিতে হবে।
রাউন্ড রবিন পদ্ধতি অর্থ মূল পর্বের প্রত্যেক দলের সাথে প্রত্যেক দলের একবার করে দেখা হবে। এভাবে সবাই ৯টি করে ম্যাচ খেলবে এবং মোট ম্যাচ সংখ্যা হবে ৪৫ টি।
পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রথম চারটি দল পৌঁছে যাবে সেমিফাইনালে। এখানে হবে ২টি ম্যাচ। সেমিফাইনাল-১ খেলবে পয়েন্ট টেবিলের প্রথম দল এবং চতুর্থ দল। সেমিফাইনাল-২ খেলবে দ্বিতীয় দল এবং তৃতীয় দল। সেমিফাইনালে বিজয়ী দল দুটির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল।
সেমিফাইনালে উঠতে হলে একটি দলকে কয়টি ম্যাচ জিততে হবে?
এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচ গুলোর উপর। কিন্তু একটা সেফ জোন অবশ্যই আছে। কোনো দল যদি ৬টি ম্যাচ জিতে তাহলে সে দল নিশ্চিন্তে সেমিফাইনালে পৌছে যাবে। দলটির রান রেট এবং অন্য কোনো দলের জয় বিজয়ের ক্যালকুলেশন করতে হবে না।
সেমিফাইনালে উঠতে কী ৬টি ম্যাচই জিততে হবে?
না। ভাগ্য ভালো থাকলে একটি দল ৩টি ম্যাচ জিতেও সেমিফাইনালে পৌছাতে পারে। এক্ষেত্রে পয়েন্ট টেবিলের প্রথম ৩টি দলের পয়েন্ট অন্য দল থেকে অনেক বেশি হতে হবে এবং চতুর্থ দলটিকে ভালো রান রেটের সাথে ৩টি ম্যাচে জয়লাভ করতে হবে। এছাড়াও অন্য আরো ক্যালকুলেশন করতে হয়। ৩টি ম্যাচে জয়লাভ করে সেমিফাইনালে পৌছানোটা বিরল।
বিশ্বকাপের ভেন্যুর বিবরণ
বিগত আসর গুলোর তুলনায় এবারের বিশ্বকাপ বেশি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ বিশ্বকাপটি দুই দেশে অনুষ্ঠিত হওয়া সত্তেও ভেন্যুর সংখ্যা ছিল ১০টি। অন্যদিকে আইসিসি ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য ভারত ১৩ টি ভেন্যু প্রস্তুত করেছে।
এবারের বিশ্বকাপ কোন দল জিতবে?
এখনকার ক্রিকেট বিশ্বে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ নয়। ২০০০ সালের দিকে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই বলা যেত এই বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া জিতবে। কিন্তু এখন তা বলা যায় না। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটা দলই ফাইনাল জয়ের স্বপ্ন নিয়ে আসর শুরু করে।
তবুও বিগত বছরের পারফরম্যান্স দেখে এবং বিশ্বকাপের ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে কিছুটা আচ করা যায় যে কাদের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি। যেহেতু এবার খেলা হবে উপমহাদেশে তাই বলা যায় উপমহাদেশের দলগুলো অর্থ্যাৎ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বিগত তিন আসরে আয়োজক দেশ বিশ্বকাপ তাদের ঘরে তুলে নিয়েছে। ২০১১ সালে ভারতও তাই করেছিল। ভারত এখন ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা দলগুলোর একটা। এই দিকগুলো বিবেচনা করে বলা যায় ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
আইসিসি ওডিআই বিশ্বকাপের ইতিহাস
১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ থেকে ২০১৯ এ পর্যন্ত ১২টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ হয়েছে ইংল্যান্ডে (৫বার) এবং সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া (৫বার)। এ পর্যন্ত মাত্র ৬টি দেশ বিশ্বকাপের ট্রফিতে তাদের নাম লেখাতে পেরেছে।
এবারের বিশ্বকাপটি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো কেউ কারো থেকে শক্তিমত্তার দিক থেকে পিছিয়ে নেই। যেখানে দুইবার বিশ্বকাপ জয়ী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শক্তিশালী বিশ্বকাপ জয়ী দল শ্রীলঙ্কা সরাসরি মূল পর্বে প্রবেশ করতে পারেনি সেখানে বোঝা যায় বাকি দলগুলো কতটা শক্তিশালী। এই বিশ্বকাপের সকল আপডেট জানাতে আমরা রেডি। আপনি রেডি তো?
0 Comments